বিএনপি নেতার ছেলে ছাত্রলীগের সম্পাদক, এলাকায় তোলপাড়

ডেস্ক রিপোর্ট •

বিএনপি নেতার ছেলেকে পাবনার ফরিদপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলা ছাত্রলীগ সম্মেলন ছাড়াই বিএনপি পরিবারের সন্তানকে সম্পাদক করায় সমালোচনা চলছে কমিটির পদবঞ্চিত একটি গ্রুপের মধ্যে।

ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝেও চলছে সমালোচনা। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে ফরিদপুর উপজেলা ছাত্রলীগের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে সোহেল রানাকে সভাপতি ও জাহিদ হাসানকে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয় জেলা ছাত্রলীগ।

পাবনা জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফিরোজ আলী ও সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলামের স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। পদবঞ্চিতদের দাবি কোনো ধরণের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

পদবঞ্চিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জানান, নব নির্বাচিত ফরিদপুর উপজেলা ছাত্রলীগ সম্পাদক বিএনপি পরিবারের বলে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকার পরেও বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে জেলা ছাত্রলীগ তাদের মনোনীত করে কমিটি বাণিজ্য করেছে। তৃণমূলের ত্যাগী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না। বিষয়টি জানাজানি হলে সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় ওঠে। অনেকেই ফেসবুকে কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন। একে পকেট কমিটি বলে মন্তব্য করছে একটি পক্ষ। কমিটি বাতিলের দাবিতে পদ বঞ্চিত একটি গ্রুপ রাতে মিছিলের ঘোষণা দিলেও পরে তা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ফরিদপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আমির ফয়সাল জানান, বঙ্গবন্ধুর গড়া সংগঠন স্বাধীনতার রক্তের সঙ্গে মিশে থাকা ছাত্রলীগে বর্তমান পকেট কমিটি হয়েছে। যা মেনে নেওয়া কঠিন। কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব তৈরির জন্য আমরা দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সোহেল রানা ও জাহিদ হাসানকে সভাপতি ও সম্পাদক মনোনীত করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সোহেল রানার চাচাতো ভাই উপজেলা শ্রমিক দলের বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক এবং জাহিদ হাসানের বাবা মৃত আব্দুল হামিদ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও বনওয়ারীনগর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ছিলেন। ১৯৯১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত উপজেলা যুবদলের আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিলেন। জাহিদ ছাত্রলীগের কোনো ইউনিটের সদস্য ছিল না। ত্যাগী কর্মীদের কোনো সুযোগ না দিয়ে জেলা ছাত্রলীগ টাকার বিনিময়ে বিএনপি পরিবারের সন্তানদের কাছে কমিটি বিক্রি করেছে। আমরা এই বিতর্কিত কমিটি বাতিল চাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পদবঞ্চিত এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, কমিটি দেওয়ার নামে জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফিরোজ আলী ও জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব বিশ্বাসের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে মোটা অংকের টাকা নেওয়া হয়েছে। এখন শুনছি সব প্রার্থীদের কাছ থেকেই তারা টাকা নিয়ে কমিটি বাণিজ্য করেছেন। শুধু তাই নয় আওয়ামী লীগ পরিবারের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে চিহ্নিত বিএনপি পরিবার থেকে সভাপতি ও সম্পাদক মনোনীত করেছেন। আমরা এ ঘটনায় লজ্জিত। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও কমিটি বাতিল করে ত্যাগী নেতৃত্বের মূল্যায়ন চাই। তৃণমূল থেকে উঠে আসা ছাত্রলীগকর্মীদের বর্তমান কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করার দাবি জানান তিনি।

ফরিদপুর পৌর মেয়র জেলা আওয়ামী লীগ নেতা খ ম কামরুজ্জামান মাজেদ বলেন, নেত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা ছাত্রলীগ নেতাদের সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে নির্দেশ দিয়েছিলাম। তারা এটা না শুনে বিএনপি পরিবারের অছাত্র ব্যবসায়ীদের সভাপতি ও সম্পাদক বানিয়েছে। কমিটিতে যাদের পদ দেওয়া হয়েছে তাদের কাউকেই ছাত্রলীগের অগ্রভাগে দেখিনি। ইতোপূর্বে তারা ছাত্রলীগ করেছে কি-না সেটা আমার জানা নেই। কমিটিতে যাদের স্থান হওয়ার কথা তাদের না হয়ে হঠাৎ করে মনে হলো আকাশ থেকে উড়ে এল কমিটির নাম।

ফরিদপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য মনোনীত কমিটির সভাপতি সোহেল রানা বলেন, বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিএনপি পরিবারের এটা মনগড়া বানোয়াট তথ্য। ছাত্রলীগে অনেক প্রার্থী থাকে, পদ বঞ্চিতরা অপপ্রচার চালাবে এটাই স্বাভাবিক। তার বড় ভাই উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বলে জানান তিনি। সে আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। আমরা সবাই মিলেমিশে ছাত্রলীগকে এগিয়ে নিতে চাই। সব ভেদাভেদ ভুলে ছাত্রলীগের মধ্যে ঐক্য আনতে হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করতে হবে।

এসব বিষয়ে জানতে সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

অর্থের মাধ্যমে কমিটি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সদ্য মনোনীত নেতারা বিএনপি পরিবারের সন্তান নয় বলেও দাবী তাদের।

পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম বলেন, সদ্য মনোনীত নেতারা বিএনপি পরিবারের নয়। দীর্ঘ দিন ধরেই উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনের জন্য তাগিদ দিলেও তারা সম্মেলন করেনি। এমনকি সম্মেলনের কথা বললে বিভিন্ন তালবাহানা করত। যেহেতু সম্মেলন হচ্ছে না তাই দুইজন ভালমানের ক্লিন ইমেজের ছেলেকে পদ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেই তাদের মতামতের ভিত্তিতেই পদ দেওয়া হয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের পদপ্রার্থী কিছু নেতা আছে তারা ছাত্রলীগের পদ পাওয়ার জন্য বর্তমান কমিটির নেতাদের নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ছাত্রলীগ ইতিহাস ঐতিহ্যের সংগঠন। এখানে কোনো স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ নেই।

পাবনা জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফিরোজ আলী বলেন, ছাত্রলীগ একটি বড় সংগঠন। এখানে অনেক প্রার্থী থাকেন। সবাইকে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত করা সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোনো ধরনের অর্থ লেনদেন হয়নি। পদ বঞ্চিতরা মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। উপজেলা সভাপতি মনোনয়ন পাওয়া সোহেল রানা এর আগেও ছাত্রলীগের কমিটিতে ছিলেন। জাহিদ হাসানকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সুপারিশে পদ দেওয়া হয়েছে।

আরও খবর